পিরোজপুরের মিরুখালী-বাদুরা-ভারানী ও বাদুরা (ভুতার) খাল রক্ষায় হাইকোর্টের নির্দেশ

প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম
শেয়ার করুন:  
পিরোজপুরের মিরুখালী-বাদুরা-ভারানী ও বাদুরা (ভুতার) খাল রক্ষায় হাইকোর্টের নির্দেশ

মো. রোকনুজ্জামান শরীফ, মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি:  পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী-বাদুরা-ভারানী ও বাদুরা (ভুতার) খালে নির্মিত অননুমোদিত বাঁধ (ক্রস বাঁধ), রাস্তা ও স্থাপনা অপসারণের বিষয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। 


(২৭ জানুয়ারি ২০২৫) হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এক আদেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণের ব্যর্থতাকে বেআইনি, আইনগত কর্তৃত্ববিহীন ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না।


একইসঙ্গে আদালত পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, মঠবাড়িয়া উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মিরুখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেসা স্নাতক কামিল মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে অনতিবিলম্বে আইন অনুযায়ী এসব অননুমোদিত বাঁধ, রাস্তা ও স্থাপনা অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া, আদালতের আদেশ প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী তিন মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়ের করা জনস্বার্থমূলক মামলা (নং ১২৭৩১/২০২৪) প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।


পিরোজপুরের কৃষিনির্ভর মঠবাড়িয়া উপজেলার ৩ নম্বর মিরুখালী ইউনিয়নের বাদুরা মৌজায় অবস্থিত “মিরুখালী-বাদুরা-ভারানী” খালটি প্রায় ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০০ ফুটেরও অধিক প্রশস্ত, আর “বাদুরা (ভুতার)” খালটি ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫০ ফুট প্রশস্ত। কিন্তু সরকারি বিভিন্ন সংস্থা খাল দুটি ভরাট করে ক্রস বাঁধ ও পাকা সড়ক নির্মাণ করেছে, যা জলপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।


বিশেষ করে, বাদুরা (ভুতার) খালটি আড়াআড়ি ভরাট করে বাঁধ নির্মাণ করেছে বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেসা স্নাতক কামিল মহিলা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে, তারা খাল ভরাট করে চলাচলের রাস্তা ও মাদ্রাসার মূল ফটক নির্মাণ করেছে। খালগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য বেলা এ মামলাটি দায়ের করে।


বিবাদীগণ ও আইনি প্রতিনিধিত্ব

মামলার বিবাদী হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, বরিশাল ও পিরোজপুর জেলার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।


বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট তৌহিদুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব তানিম খান।


আদালতের আদেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে অননুমোদিত বাঁধ, রাস্তা ও স্থাপনা অপসারণ করতে হবে এবং অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে। আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন হলে খালগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার হবে এবং জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হবে বলে আশাবাদী স্থানীয় বাসিন্দারা।